জার্নাল : দেবজ্যোতি রায়






আমার ঠাকুর্দার ছিলো রবীন্দ্রনাথের মতো লম্বা দাড়ি আর অসম্ভব ছিলেন তিনি নদীবায়ুগ্রস্ত । আজীবন দৌড়েছেন কোনও না কোনও নদীর পাশাপাশি । ঘর বেঁধেছেন কোনও না কোনও নদীর পাশে । প্রসঙ্গত নদী ও গণিকার মধ্যে সম্পর্কের এই কূটাভাস থাকে যে উভয়েই নারী,উভয়েই বহুগামী হয়ে নিষেধের যাবতীয় গণ্ডি ভাঙে । যদিও নদী ছোটে অসীমের দিকে সে যাত্রিক আর গণিকা দেহ ও মনে অসীমের চেতনাহীন স্বস্থানেই থাকে । গণিকাও ফলে বিষাক্ত বিদ্রোহিনী নদী বিষাক্ত প্রজ্ঞাপারমিতা । গণিকাকে না বুঝলে নদীকে বোঝা যায় না এবং উল্টোটাও । এবং নদী ও নারী উভয়কেই বন্ধনে ফেলে পুরুষ হারিয়েছে অনির্বচনীয়কে ছোঁবার স্বপ্ন,সাধ ও আকাঙ্ক্ষা। ঠাকুর্দার মৃত্যুর বহু পরে জেলার সাপ্তাহিকগুলোর পুরোনো সংখ্যায় লাইব্রেরিতে হন্যে খুঁজেও আমি নীরস 'অবিচুয়ারি' ছাড়া অন্য কিছু পাইনি । একজন স্বপ্ন ও নদীতাড়িত,স্বাধীনচেতা,কর্মোদ্যোগী মানুষের যিনি নদীকে নদীর অধিক ভেবেছেন,ছুটেছেন নদীর পাশেপাশে এবং জীবনের শেষক'টি বছর স্বপ্নহীন জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে একটি কথাও বলেননি,তাঁর এতো ছোট্ট,গরিমাহীন,সাধারণ যৌনজীবন আমি মনের দিক থেকে আজও মেনে নিতে পারিনি । নদী বিষয়ে একটা প্রকাশ্যে কেচ্ছাও কি তিনি,অন্তত তাঁর এই নষ্ট নাতিটির জন্য রেখে যেতে পারতেন না ?

সুতোর জট যেমন শুধু জটের নিয়মেই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থাকে আমরাও জট পাকিয়ে পড়ে থাকি নিঃসাড় অস্তিত্বের ইঙ্গিতগুলোকে দেখেও দেখি না ধরেও পারি না ধরতে । খুঁজে পাই না গোলকধাঁধাটির শেষে ফলে সেই অত্যুজ্জ্বল দৈবগ্রন্থাগারটিকে যার একাধিক জাদু-দরজা উন্মুক্ত করে দেয় একাধিক সম্ভাবনাকে যেখানে থাকেন সেই ভৈরবী যাঁহারা জ্বালিয়ে রাখে কালো গান,উপাসনা,জারজ বাদাম,ভেষজ,কালো রাত্রিগুলি আর সামান্য পিদিম --- বর্বরের । নিজের দুর্গের আয়নায় যে-যেটুকু আকাশ দেখি তাহাতেই তৃপ্ত হই অতএব

আমার জন্মের যখন মাত্র একমাস শুনেছি নদী এগিয়ে এসেছিলো আমাদের বাড়ির পাশে,এখানে সেটাকেই বড় বন্যা বলে,তার আগে নদী আসেনি শহরের মধ্যে আর আমি নদীর সেই কালো ঘোলা জলে পড়ে গিয়েছিলাম আম্মার (বড় জ্যেঠি,আমরা আম্মা বলে ডাকতাম) কোল থেকে এক  পাড়াতুতো কাকার কোলে যেতে গিয়ে, নদীতে সেই প্রথম আমার পূর্ণস্নান । পরে কিছুটা বড় বেলায় আমি প্রতিদিন দিনের বেলায় তো বটেই সন্ধ্যা-রাতেও,কতবার যে কী টানে গিয়ে দাঁড়াতাম নদীর পাড়ে,ঘুরতাম পাড় ধরে ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ ।দেখতাম চিৎ হয়ে শোওয়া মাগির উদ্ধত যুবতী বুক ,সরু কোমর,গভীর স্নিগ্ধ নাভিদেশ ও টসটসে ঊরুসন্ধি,পায়ের মাংসল গোছ,চওড়া ভারী নিতম্বের ঘন আভাস,দুরন্ত এলোচুল,ওর কপালের উজ্জ্বল টিপ,মুগ্ধতায় । আঙুল ডুবিয়ে স্পর্শ করতাম ওকে । এক অতিলৌকিক শিরশিরানি বেজে উঠতো মৃদু তবলার মতো আমার উষ্ণ রক্তের প্রতিটি অন্তর্গত কণায় । তোরসার দিকে তাকিয়ে আমি কৌমার্য হারাতাম । বাড়ি ফিরে আসতাম শিথিল দার্ঢ্য নিয়ে ।

ভালোবাসি দিবাস্বপ্ন,উদ্যমহীনতা । দালাই লামার সঙ্গে তিব্বতের নিসর্গ বেয়ে খচ্চরের পিঠে যাচ্ছি আমরা । 'অস্তিবাদ' সংক্রান্ত আমাদের আলোচনায় আমাদের দেহ ক্রমশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত উচ্চতা । আমরা ঢুকে পড়ছি অথবা আমাদের ছায়া,সৌরমন্ডলীর জ্যোতির ভিতর । আমাদের ছায়াসঙ্গী কয়েকটি মাত্র পর্যটক ফুল ।

গভীর রাতে যে শোকাচ্ছন্ন ট্রেনটা নদীর দিকে যাত্রা করে কেবল সেই জানে সত্তরের লাশগুলি প্রতিদিন রাতে কতোটা ভিজিয়ে দিতো অপার্থিব নদীকে । এখন আমরা জানি যে একটা চক্রের মতোন সময়ের আবর্তন । বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় 'হাজার বছরের নিঃসঙ্গ' রক্তের দাগ । ... পড়ে থাকে এক ভয়ংকর আশ্রবের পৃথিবী । ' ... ভুঁড়ির মধ্যে ঠাসা আছে ঘৃণা আর জীবন সম্পর্কে নিশ্চয়তা ।' --- লিখেছিলেন আর্তো ।

নদী যাকে গর্ভের কান্না দিয়ে ছোঁয় তারও সাধ্য কী যে নদীর গর্ভে সে জন্ম দেয় আরেকটি নদীকে ? কিংবা নদীর সঙ্গে সঙ্গমে মানুষ নদীগর্ভে জন্ম দেয় দ্বিতীয়বার নিজেকেই । সেই তার 'দ্বিজ' হয়ে যাওয়া নইলে 'ব্রাম্ভণ' শব্দের কোনও অর্থই হয় না ।

কার্তিক বাল্মীকি । আমার ব্ন্ধু  পেশায়: ভবানী সিনেমা হলের টিকিট ব্ল্যাকার । চাকু চালানোতে ছিলো ওস্তাদ । ওর মাকে আমি মাসি ডাকতাম,ওর বাবা মহাদেব বাল্মীকিকে মেশো । দুজনেই ছিলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের ঝাড়ুদার । ওঁদের বাড়িতে আমি ছিলাম কয়েকমাস । দুজনেই আমাকে ডাকতেন বড়া বেটা বলে । রোজ রাতে মহাদেব মেশো দু' বগলে দুটো বাংলার পাঁইট আর হাতে 
পাঁঠার নাড়িভুঁড়ি কাগজের ঠোঙায় নিয়ে ঘরে ঢুকেই ডাকতেন,আ যা বড়া বেটা,দেখ তেরে লিয়ে ক্যা লায়া হুঁ । মাসি সেই নাড়িভুঁড়ি ভাজতেন আর আমি ও মেশো সেই অনবদ্য চাট দিয়ে যেটা আমি পরেও খেয়েছি ভবানীপুরের গাঁজা পার্কে চ্যাটার্জিদার,আমার সহকর্মী সেসময়,সঙ্গে,বাংলা শেষে রাতের রুটি খেয়ে ঘুম । কার্তিক আমার পেছনে ঘাপটি মেরে বসে থাকতো,আমি মেশো মুখ ঘুরালেই গ্লাস ঠেলে দিতাম পেছনে কার্তিকের দিকে । সেই কার্তিকই যখন খুন হলো,মাসি-মেশোর ভালোবাসা আমি আজও ভুলিনি,দুজনের ঝগড়া হলে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কেউই যেনো ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেনা এমন ,ওর শরীরের কালো রক্ত সাগরদিঘির চারপাক ঘুরে বড় বাজার,মাগিপাড়া,কোতোয়ালি,ভবানী সিনেমা,হাসপাতাল,কালো চতুর কোট,কাঠগড়া,গ্রামীণ ব্যাঙ্ক,ভাটিখানা,জুয়ার আড্ডা,গাঁজার ঠেক,যেখানে যেখানে ও যেতো বা যাবে বলে ভেবেছিলো সে সব অন্ধকার জায়গায় প্রণাম করে শ্মশানে এসে পৌঁছেছিলো । ওর শরীরের রক্ত ওর মৃত্যুর পরে এতো ঘুরেও কোনও প্রাথমিক,মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক,জুনিয়র স্কুল ও  কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়,ছাত্রাবাস,বিদগ্ধ অণ্ডকোষ,পার্টি অফিস ইত্যাদি আলোকিত জায়গাগুলিতে গিয়ে একবারের জন্যেও প্রণাম জানায়নি । কারণ কার্তিক আলো সহ্য করতে পারতো না । আলো নামের একটি মেয়েকে ও একবার ধর্ষণ করতে চেয়েছিলো । নিজের বাচ্চাটাকেও ও রেখে গিয়েছিলো ওর বৌয়ের অন্ধকার গর্ভে আর পরে ওদের কেউ খুঁজে পায়নি ।

রূপ ও অরূপের মধ্যে,মূর্ত ও বিমূর্তের মধ্যে,সসীম ও অসীমের মধ্যে,খণ্ড ও পূর্ণের মধ্যে,ক্ষুদ্র পৃথিবী ও বিপুল মহাজাগতিক রহস্যের মধ্যে,ক্ষণিক ও চিরন্তনের মধ্যে,শব্দ ও নৈঃশব্দের মধ্যে,আলো ও আঁধারের মধ্যে,বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মধ্যে,চেতন ও অবচেতনের মধ্যে,বিপন্নতা বোধ ও মুক্তির মধ্যে,মহত্ব ও পাপের মধ্যে,মৃত্যু ও জীবনের মধ্যে,বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে,বিষয় ও বিষয়ান্তর এবং বিষয়হীনতার মধ্যে,সৃষ্টিলিঙ্গ ও সৃষ্টিযোনির মধ্যে,সহজ চলাচলের সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলো একদা যে মানব সে এখন খিন্ন পড়ে আছে । বস্তুত এই দড়ি টানাটানির মধ্যবর্তী অঞ্চলটিতেই বাস করেন মানুষের মধ্যেকার কবি ।

'
আসছি আমি মরার থেকে,জন্মানোর থেকে নয় । জন্মানোর থেকে আমি পালাচ্ছি ।' --- লিখেছিলেন সেই অসাধারণ মানুষটি,আন্তনিও পোর্কিয়া । --- মৃত্যু আমার ভাবনার অনিবার্য বিস্তারগুলির অন্যতম । 

মৃত্যুর তিনদিন আগে রাত্রি ১২টায় ফোন করে অরুণেশ ঘোষ বললেন,দেবু,আইসো,তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে । কে জানতো অরুণেশ আর তিনদিন পরেই ... কী কথা ছিলো আর জানা হবে না কোনোদিন !

আমাকে আর অম্বিকাদাকে যেদিন নলোংগিবাড়িতে ধরে থ্যাঁৎলানো হচ্ছিলো আর ছলিদা ও সাধুদার জোড়া জোড়া চোখ যেগুলি ক্ষমতার ভোজে একদিন উৎসর্গ হবে বলেই হয়তো অলমাইটি ওদের দিয়েছিলেন,শুধু একটুকরো খাস জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো যা আলোচনা করেই অনায়াসে মিটে যেতে পারতো বলে আমার বিশ্বাস,আমরা সেজন্যই গিয়েছিলাম,১৯৭৯-তে দু'কিলোমিটার দূরের পশারিহাট থেকে ডকডকে রোদ আর ছুপা রুস্তম বাতাসের ভালগার ভালোবাসাবাসির দৃশ্যের মধ্যে সেদিন আচমকা ঢুকে পড়েছিলো উত্তেজিত রামদা,ত্বক-মসৃণ তরোয়াল,তেল চকচকে লাঠি,বাতাসের মাংস কেটে উড়ে যাওয়া বর্শা,মৎস্য কুমারীর নরম দেহের স্বাদে আকণ্ঠ পিয়াসী কোঁচা,নাবালক ছুরি-চাকু,খন্তা-শাবল ওই বয়স্কদের মধ্যে,সবমিলিয়ে জনা ষাটেক ওই অত্ত ঘরবাড়ি,পথঘাট,গাছগাছালি,জমিজিরেত,গরু-মোষ,হাঁস-মুরগি,মানুষজনের বিস্ফারিত চোখের সন্মুখ দিয়ে সেওতো ওই ক্ষমতার অন্ধ,মাংসাশী অহংকার যাকে না দেখলে বোঝা যায় না ।

ক্লাস এইটের তুখোড় ছাত্র খাতায় লিখেছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে অনায়াস ও সরল বাক্য : অনামিকা,তোমাকে চুদতে চাই । অভিধান বহির্ভূত এই শব্দ সে নিশ্চই শুনেছিলো বড়দের কাছে,বড়রা তাদের বড়দের কাছে,কিংবা হয়তো কারও কাছ থেকেই শোনেনি,নষ্ট বাক্যের এ যেনো এক নদী যা জন্মের মধ্যদিয়ে আমাদের সবার অন্তর্গত রক্তে প্রবেশ করে;প্রবাহিত হয় । আমরা সবাই সেই একই নদীতে অবগাহন করি পৃথিবীতে আসা প্রথম মানুষটি থেকে পৃথিবীর আগামী শেষ মানুষটি পর্যন্ত;এই সেই রক্তে বহা স্রোতস্বিনী যা সমগ্র মানবজাতির ঐক্যের সূত্র নির্দেশ করে,এবং এখানেই বিরাজ করেন মানুষের ঈশ্বর হয়তোবা যাকে চেতনায় ক্রমশ ভুলতে চাই জন্য আমরা গড়ে তুলি নিজেদের সম্পর্কে বেঢপ ধারণা সব এবং মিথ্যাকেই তখন সত্য বলে জানি । যে জন্যে মেনিমুখো জটিল মাস্টারমশাই,কল্পনায় বহুবার অনামিকার অনির্বচনীয় নিসর্গে হানাদার জঙ্গি,সেই খাতা কেড়ে তুলে দিয়েছিলো ছাত্রটির মায়ের রোজ রাতের প্রেমিক ও খুনি বাবার হাতে,ধর্ষকাম সেদিন তৃপ্তি লাভ করেছিলো অন্য উপায়ে । দিশেহারা হয়েছিলো ছাত্রটি । তারপর বুঝে গিয়েছিলো হয়তো,এও এক মাদারীর খেল --- তোমার সন্তান তোমার থেকে শিখে নেয় কী করে প্রতিকূল জল ও মাটির মধ্যে,কী করে কুমীর বউয়ের সঙ্গে এক খাটে,কী করে রুপোলি অক্টোপাস প্রিয় প্রথম প্রেমিকা,কী করে চিন্তাকে লুকিয়ে রাখা যা পাহাড়টাও জানবে না । --- কারণ এরপরে আর কখনও অন্তত খাতায় যতদিন সে নাবালক ছিলো ওসব নষ্টবাক্য লেখেনি ।

আমি লিখছিলাম,যুদ্ধে যে জয়ী সেই তো পরাজিত ,যে পরাজিত সে ও জয়ী । গুস্তাভ ফ্লবের লিখছেন তাঁর আহাম্মকের অভিধানে,যুদ্ধ : সর্বদাই 'রক্তগঙ্গা' বইয়ে দেয় । সর্বদাই দুজন বিজয়ী হয় : বিজয়ী ও বিজেতা ।

লাটাগুড়ির এক আদিবাসী গ্রামে,জঙ্গলের ভেতর,যেতে গিয়ে রেললাইন ধরে ঝুপ করে 'মিলনোন্মত্ত বাঘিনীর গর্জনের মতো অন্ধকারের চঞ্চল বিরাট সজীব রোমশ উচ্ছাসে' সন্ধ্যা-যুবতী নেমে আসতেই আমি আর আলিপুরদুয়ারের দুই ব্ন্ধু (শিবু ও পূর্ণদা) ঢুকে গেলাম যুবতী সন্ধ্যার আগুনজ্বলা গভীর শরীরের বলিষ্ঠ প্রেমের ভিতর । গোটা দেশ জুড়ে তখন জরুরী অবস্থা । হারিয়ে গেলাম জঙ্গলে মায়ায় সে রাতের মতো এক অলৌকিক ভালোবাসায় ভিজতে ভিজতে ।
সেসব জঙ্গলে ভুটান-হিমালয়ের দিক থেকে দলবেঁধে হাতি নেমে আসতে শুনেছি । ঐরাবতের মর্ত্যবাসী ভাই ও বোনেদের সঙ্গে দেখা কেনো সে রাতে হলো না জানি না । হয়তো জঙ্গল সে সময়ে গভীর ছিলো বলে ! হয়তো তারাও ভিজছিলো সে রাতে অলৌকিক কোনও ভালোবাসায় ! কিংবা মানুষের বহু প্রাচীন দোসর হাতিরা হারামি মানুষের সব অপকর্মকে সে রাতের মতো ক্ষমা করেছিলো আদিম মায়াবী রাত্রিগুলির কথা মনে রেখে ! পরে পূর্ণদা ওই অতো বৃষ্টিপাতের মতো ভালোবাসায় ভিজে (গোটা রাত বৃষ্টি পড়েছিলো অঝোর ধারায়),অনভ্যাসবশত,সেই যে বাড়ি ফিরে অসুস্থ হলেন,ছমাস বাদে মারা গেলেন । কিংবা এও হতে পারে ওই অতো বৃষ্টিপাতের মতো আদিম অলৌকিক ভালোবাসায় ভিজে,একবার আপ্লুত হয়ে,আলো পৃথিবীর এতো প্রেমহীনতা ও চুতিয়াপনা আর সহ্য হবে না বলে আমাদের আগে ফের অন্ধকারের স্তনের মধ্যে,যোনির মধ্যে শুয়ে থাকতে তিনি চলে গেলেন;আসলে মারা যাননি পূর্ণ দা । 
সৃষ্টিশীলতার সেই বিপুল রোমশ অন্ধকার হয়তো শিবুই বোঝেনি শুধু । তাই আজও এক পুরোনো ভোরের দোকানে ও কেনে ওর আশ্চর্য খাটো পোষাক । আমি বেঁচে থাকি । নগ্ন করে গেছে সে রাতে কে যেনো আমাকে !

আর প্লুতেরো,হিমেনেথের গাধাটির মতো আমার নিজেরও একটি বিলক্ষণ গাধা ছিলো । তার নাম রেখেছিলাম ওই --- 'বিলক্ষণ' আমি তার পিঠে সকাল-সন্ধ্যা তোরসার পাড় ধরে ঘুরে বেড়াতাম এবং প্রায়শই এই ভ্রম হতো যে কে বাহন আর কেইবা বাহিত ! নদী তখন খচড়ামি করিয়া চোখ মারিতো বলিয়াই কি ! কিংবা এসবই ক্ষণিকের জন্য । মহত্বের তলদেশের ঘা যে দেখে ফেলে তার আর ফিরবার উপায় থাকে না ।

পাঠক,জীবন হলো খুব উঁচু অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্বতের বিপজ্জনক ভাঁজে স্ত্রী ঈগলের সঙ্গে অনন্তকাল;সঙ্গী শুধু সৃষ্টির পূর্বেকার সেই দাহিকা আগুন,হৃদয় বিদীর্ণ করে ছুঁয়েছে আমাকে ।

একটি অর্ধনগ্ন বালিকার উদরে আমি একদা প্রবেশ করিয়াছিলাম দেখিয়াছি তাহার যকৃত বৃক্ক প্লীহা ও পাকস্থলি এবং অবশ্যই যেইখানে সে ভবিষ্যতে 'মা' হইবে সেই স্থান । অমন রমণীয় প্রদেশ আমি পূর্বে দেখি নাই । কফ ও ক্বাথ রক্ত ও পুঁজের ভিতর কিয়ৎক্ষণ গড়াগড়ি যাইয়া যখন বাহির হইলাম তাহার সে-কী উল্লাস সে বোধহয় ভাবিয়া থাকিবে সেই আমাকে সৃষ্টি করিলো ! অযোনিসম্ভূত হইবার বিড়ম্বনা এড়াইতে আমি তাহা স্বীকার করিলাম ও সেইক্ষণ হইতে তাহাকে 'মা' ডাকিতে শুরু করিলাম সে তুষ্ট হইলো । কোলে তুলিয়া সে আমার মুখে একটি বর্তুলাকার মধুথলি গুঁজিয়া দিলো ও অপরটি খেলিবার নিমিত্ত হাতে ধরাইলো ক্রমশ সে আমাকে শিখাইলো ব্রীড়া ক্রীড়া কৌতুক শয়ন গমন বমন শিকার পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি আমি তাহাকে স্ত্রী বলিয়াও জানিলাম । আমাদের সহবাসে একাদিক্রমে ছয়টি পুংশিশু জন্মাইলে সে তাহারদিগের সঙ্গেও সেইরূপ করিলো যাহা পূর্বে আমার প্রতি করিয়াছিলো আমি বুঝিলাম এই ছয়টি পুংশিশু ভবিষ্যতে বালিকার ভর্তা হইবে এবং আমার পশ্চাদ্দেশে ন্যায় সঙ্গত লাথি মারিয়া আমাকে তাড়াইয়া দিবে কিংবা তাহারদিগের বর্শার মাথায় গাঁথিয়া বাটি-সম্মুখস্হ বৃক্ষে চিত্রবৎ টাঙাইয়া রাখিবে । আমি তখন এক কৌশল আবিষ্কার করিলাম ঘোষণা করিয়া দিলাম যে,কোনও জন্মদাত্রী ভবিষ্যতে তাহার সাবালক আত্মজদের সঙ্গে শয়ন করিবে না কিংবা তাহারদিগের বীজ আপন শরীরে ধারণ করিবে না দুইয়ের যেইটি বেশি ফলদায়ক সেইটি কার্যকর হইবে অথবা দুইই । ইহাতে সে যারপরনাই কুপিত হইলো বটে কিন্তু আমি স্বস্তি পাইলাম কৌশলটির চমৎকারিত্বে আমি এতোই আবিষ্ট হইয়াছিলাম যে আমি নিশ্চিত ছিলাম সেই বালিকা বা ভবিষ্যতে কোনও আত্মজও এবং অপরাপর বালিকা বা তাহারদিগের আত্মজেরাও ইহাকে কৌশলরূপে চিন্হিত করিতে পারিবে না ইহা এক অমোঘ নিয়মেরই অংশ হইলো বটে । জগৎ পাল্টাইবে মানুষ পাল্টাইবে বিধির অনেক বিধানও পাল্টাইবে কিন্তু ইহা অপরিবর্তিত থাকিবে জননীতে উত্তীর্ণ হইলে নারীর শরীর হইতে অনেকখানি রক্তমাংস আপনি ঝরিয়া যাইবে শিশুকে সে আর ব্রীড়া ক্রীড়া গমন শয়ন কৌতুক শিকার পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি শিখাইবে না । জন্মপথে প্রবেশ করিয়া মানুষের আত্মা তাহার পূর্ণ আদিরূপ দেখিবে না তাহার আত্মাআবিষ্কার  ইহাতে অসম্পূর্ণ থাকিয়া যাইবে সে আর সরল থাকিবে না চরিত্র জন্ম লইবে ও তাহা ঘুণপোকাদিগের অবশ্যম্ভাবী খাদ্য হইবে । তাহার সৃষ্টিশীল বিকাশ পূর্ণতার অভিমুখে যাত্রা অনন্তের অংশীদারিত্ব ইহাতে অনেকটাই খর্ব হইলো বটে আনন্দ স্বয়ং উত্তেজনার পাঁকে ডুবিলেন কিন্তু মনুষ্যসমাজ এইরূপে যে সভ্য ও কুশলী হইলো সমগ্র জগদ্কাণ্ডের ভর্তা বিবেচিত হইলো বিস্মরণের মধ্যে স্বয়ং মৃত্যুর মতো অনন্ত হইয়া রহিলো প্রগতিতে বিশ্বাসী হইলো ইহাও কি কম বড় কথা এবং কৌতুক !

'
কাম' --- এই ছোট্ট কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা জীবনকে জড়িয়ে থাকে,শব্দটি,আমি যে অঞ্চলে জন্মেছি,বড় হয়ে উঠেছি,তার ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে । এখনকার অনেক জায়গার নামের মধ্যেও কাম শব্দটি রয়ে গেছে,যেমন,কামরূপ,কামাখ্যা,কামতাপুর,
কামতেশ্বরী দেবীর মন্দির ইত্যাদি । আসাম আর উত্তরবঙ্গের অনেকটা অংশ নিয়ে এখানেই গড়ে উঠেছিলো খেন রাজবংশের ইতিহাস কাম শব্দটি এখানে পরিত্যাজ্য ছিলো না । এখানকার লোকাচারের মধ্যেও রয়েছে কামকে কেন্দ্রে রেখে নৃত্যগীত,দেবতার পুজোর আয়োজন । লোকশ্রুতি আছে যে সতীর যোনির অংশ পড়েছিলো এখানে,ফলে যা কালক্রমে তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে,গড়ে উঠেছে কামাখ্যার মন্দির । এতদঅঞ্চলে বৃষ্টির দেবতা হলেন হুদোম দেও । খরা দীর্ঘস্থায়ী হলে মেয়েরা গ্রাম থেকে দূরে জঙ্গলে ঘেরা নির্জন মাঠের মধ্যে গভীর রাতে নগ্ন অবস্থায় এই দেবতার পুজো করেন । পুজোর সময় সেখানে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ । একমাত্র পুরুষ বলতে বৃষ্টির দেবতা হুদোম দেও । দেবতার একটি নগ্ন মূর্তিকে দাঁড় করানো হয় মাঠের মাঝখানে,আর তাঁর শিশ্নটি গড়ে তোলা হয় কলাগাছের ভেতরের নরম অংশটি দিয়ে । বিশ্বাস,দীর্ঘদিন নারী সহবাসে বঞ্চিত হুদোম দেওকে তৃপ্ত করতে পারলে তিনি বৃষ্টি দেবেন,মৃতপ্রায় চরাচরে ফের জেগে উঠবে জীবন । অনেক আগে লেখা আমার 'লোকপুরাণ' কবিতাটিতে এই পুজোর বর্ণনাটি এরূপ :

ঘিরে দাঁড়িয়েছিলো মেয়েরা 
মধ্যে দেবতা নিশ্চল 
ঘন কালো মেঘ-বৃষ্টির দেবতা 
ওই দূরের পাহাড় থেকে ভাসতে ভাসতে ক্রমে 
দুশ্চিন্তায় ঝুলে পড়েছিলো মুখ তাদের 
দীর্ঘ এই রতিক্রিয়ায় ক্লান্ত তাদের শরীর 
যেনো শেষ নেই ...যদি না করতে পারে সন্তুষ্ট তাঁকে কি করে দেবেন তিনি যা আকাঙ্খিত ...
নারীর হৃদয় ও শোক কি নয় পৃথিবীর মতো ?

যতদূর চোখ যায়,ভয়ে,
কালো ফাটা মাটি...তৃষ্ণার্ত বহুকাল 
কুঁকড়ে আছে গাছ গুল্ম লতা যাবতীয় পরাগ-মিলন 
ঝলসানো মৃত মাঠ আকাশ তামাটে 
কতোকাল দ্যাখেনি মুখ বায়ু মেঘেদের আয়নাতে 
কতোকাল শোনেনি মাটি ঘাসেদের সাদামাটা 
সন্ততির গান 
কতোকাল জুড়ে খরা...যেনো ভিতর-বাহির 
মৃত দিগ্বিজয়ী ঘোড়া বিইয়ে দিয়ে সময়-কঙ্কাল 
আর বীজ...সেও কি নয় আর অঙ্কুরিত 
হবার অপেক্ষাতে ?

খুলে ফেলো বস্ত্রসম্ভার শেষ আচ্ছাদন 
নগ্ন হও পবিত্র 
আনত তাঁর সন্মুখে আবার 
তাঁর গান বিস্মৃত আদিম ভাষায় 
গোল করে ঘিরে যদিও সে ভাষাও মৃত জাগাও 
ভিতর থেকে প্রাণ ক্রমশ উদ্দাম হলে ছন্দ নাচের 
নিশ্চল হলেও তো তিনি নন তৃষ্ণাহীন 
তৃষিত বিস্তৃত বুক আর শিশ্নদণ্ডটি 
---
এখনও ভেদ করে যায় 

তখন অচেতন মাটির ওপরে 
মেয়েরা সর্বাঙ্গ দিয়ে শুষে নিচ্ছে জল 
ভিজে যাচ্ছে ভিতর-বাহির খিল কেটে কেটে খরা 
তাঁরই নির্দেশে ছুটে আসা মেঘ 
কিংবা 
তিনিই ঢেলেছেন পৃথিবীর সবকটি বীজক্ষেত্রে 
জল 
অঝোর বৃষ্টিপাত নারী জানতো গলে যাচ্ছে 
সর্বগ্রাসী খরা এই প্রেমের শুশ্রূষাতে 

মৃত্যুর রাজত্ব থেকে ফিরে এলো তারা 
মৃত গাছ লতা গুল্ম মাঠ অবাধ পরাগ-মিলন 
দেবতা অদৃশ্য এখন 
শুধু তাঁর নিশ্চল হাসি 
ঝুলে আছে শূন্যে সূক্ষ্ণতার  শরীরে হয়তোবা 
দূরাগত কোনও স্বপ্নের অসম্ভাব্যতার মতো ।

আদিম মাতৃতন্ত্রে সন্তানেরা মায়ের থেকেই শিক্ষা নিতো কামের । কাম তো মানুষের প্রাকৃতিক অর্জন । কাম কোনও পাপ নয়,একে পাপ হিসেবে,অন্যায় হিসেবে চিন্হিত করেছে পরবর্তীকালে পিতৃতান্ত্রিক ধর্ম,যদিও কামকে জয় করতে পারেনি সে । প্রাচীন হিন্দুরাও কামকে তাঁদের চতুরাশ্রমের মধ্যে মান্য করেছেন । কাম তো শুধুমাত্র রতিক্রিয়াটুকুই নয়,রতিক্রিয়া কামের একটি গুরুত্বপূর্ণ  অংশ বটে ,যে কোনও তৃপ্তিরই পশ্চাতে থাকে কাম । যোনি ও লিঙ্গ হলো সৃষ্টির প্রতীক ।আদিম মানুষেরা এটা জানতেন,তাই তাদের ব্যবহারিক জীবনে যোনি ও লিঙ্গের পুজো ছিলো অত্যন্ত স্বাভাবিক । কিন্তু প্রকৃতির শৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে এসে সভ্যতার পথে পা বাড়ালেও নিজস্ব কোনও শৃঙ্খলা আজও গড়ে তুলতে পারেনি মানুষ,ভুল পথে হেঁটে হেঁটে হেঁটে নিজেকে ধ্বংসের কিনারায় এনে ফেলেছে,দেহ ও মনে সে আজও চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল । প্রতিটি সভ্যতার গড়ে ওঠার পেছনে যুদ্ধ,হিংসা ও লোভের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে । প্রথমে তারা খুন করেছে অন্যদের,আর অবদমন চারিয়ে দিয়েছে জীবনের সর্বত্র । অবদমিত হয়েছে নারী,ঊরুসন্ধি থেকে যে আগুনের গোলকটাকে আকাশে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন আমাদের প্রপিতামহীরা তাকে ঘিরেই শুরু হয়েছিলো পোকাদের নিতম্ব দোলানো বিকট নাচ ।
পাপ যদি কিছু থাকে,অন্যায়,তাহলে সেটা কি এই অবদমন নয় ? আমি অবশ্যই অজাচারের পক্ষে বলছি না কারণ প্রথমত আজ আর সেটি সম্ভব নয় ,এবং দ্বিতীয়ত এর কুফলগুলি বিজ্ঞান আমাদের জানিয়েছে । কিন্তু মনের দিক থেকে সমগ্র মানবজাতি কি অজাচার-মুক্ত  হতে পেরেছে ? ফাল্গুনীর সেই ভয়ংকর কবিতাটি মনে পড়ে যাচ্ছে যেখানে একটি পঙক্তি যতদূর মনে পড়ছে এরকম,'ভাইফোঁটার দিন আমার চোখ পিছলে যায় বোনের বুক থেকে' বা এটসেটরা,এবং আমার অভিজ্ঞতাও অন্য কথা বলে না । কাম বা 
যৌনতার ভুল পথে অবদমনের মধ্যদিয়েই তো অবদমনমূলক এই সভ্যতার যাত্রা শুরু এবং অবদমন দাঁড়িয়ে গেলো এর ভিত্তি স্বরূপ । স্বাধীন মানুষ এখন নিজেরই জালে বন্দি ।


সেইসব ব্রতচারী মৃত প্রাচীন কুমারী,সাগরে ছড়িয়ে গেছে যাদের জাগরণ-ঋদ্ধ ঘুম,যাদের পেটের নিচে বিছানার মতো শুয়ে থাকা নদী,কুয়াশায় উন্মুক্ত প্রান্তর,ঘন কালো রাতের চাদর,যেসব প্রেম ও আলো-আঁধারের লবণ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা বেঁচেছিলো,পৃথিবীর সমস্ত দোকান-বাজার বুড়ি গণিকার মতো দেহকে সাজিয়ে তবু অনেক আলোকবর্ষ দূরে শীর্ণ পড়ে থাকে । ওইসব মৃত প্রাচীনার দেহে নক্ষত্রের চোখ,ডানা,অসীমের হয়তো রহস্য ছিলো । নিরুচ্চ পূজা,রতি ও প্রার্থনা ছিলো । আমার জানালা --- নিকষ রাত্রির দিকে ক্রমাগত একা আজও খুলে যায় বলে ওইসব মৃত প্রাচীন কুমারী,দোকান-বাজারে ঘুরে আসা খাটো মানুষের চেয়ে তাদের শরীরী ওমে নিজেকে জড়িয়ে আমি আমস্তকলিঙ্গপা শুয়ে থাকি । ... যেসব ঘটনা অতীতে ঘটে গেছে তারা আবার ঘটবে । ইতিহাস হলো সেই ঘৃণ্য ও পবিত্র আয়না যেখানে ঈশ্বর ও শয়তানের মুখ একইসাথে ভেসে ওঠে । যে খুনি এটা জানে বলে এই সভ্যতার নাভিকুন্ডে বসে অপেক্ষা করে আজও প্রবল বৃষ্টিপাতের । ... মদ আর হলুদ নাবিকের নোনাঝরা মেয়েমানুষের গান --- এই বধ্যভূমিতে অমলিন থেকো যেমন জল্লাদ ফাঁসির দড়িতে থাকে কিংবা খুনি বুলেট যখন সে খুন হয় । 'যে আত্মা তার অসুখ থেকে সেরে ওঠে,সে মারা যায় ।' --- লিখেছিলেন পোর্কিয়া । 

আমি আজও আমার অসুখ থেকে সেরে উঠতে পারিনি ।





2 comments:

  1. দড়ি টানাটানির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বাস করে মানুষের মধ্যকার কবি। জার্নালে সেটাই উঠে এল। খুব ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  2. অসম্ভব রচনা। দেবজ্যোতি দার এক অসামান্য বিমূর্ত অনুভব। নদী আর জীবনের সমস্ত ঘাট ছুঁয়ে আমাদের এক দার্শনিক উন্মোচিত দ্বারের প্রেক্ষাপটে ফেলে রাখে।

    ReplyDelete